বিশেষ প্রতিবেদন: লাকসামে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের ২শ’ একর জমি প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। রেলওয়ের জনবল ও অর্থ সঙ্কটে জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ফলে এলাকার প্রভাবশালী লোকজন রেলওয়ের ভূমি জবরদখল করে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে বিক্রি-ভাড়া দিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে, কিন্তু এ নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ নেই। অভিযোগ উঠেছে, ঊর্ধ্বতন রেল কর্মকর্তারা দখলকারীদের সহযোগিতা করে নিজের পকেট ভারি করছেন।
জানা যায়, পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের অন্যতম ও ব্রিটিশ আমলে তৈরি শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী লাকসাম জংশন তিনশ’ একর ভূমির ওপর নির্মিত।
এ জংশনের আওতায় জংশন এলাকা, লাকসাম-নোয়াখালী রেলপথের দৌলতগঞ্জ বাজার ও রেলস্টেশন, ফতেপুর ও নবগঠিত মনোহরগঞ্জ উপজেলার খিলা রেলস্টেশন বাজার, নাথেরপেটুয়া রেলস্টেশন বাজার, বিপুলাসার রেলস্টেশন বাজারে প্রায় ২শ’ একর জমিতে একের পর এক গড়ে উঠেছে বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মার্কেট। প্রভাবশালী মহল দখলে নিয়েছে রেলওয়ের জমি।
জানা গেছে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দখলকারীরা রেলওয়ের জমি রেল কানুনগোসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে লিজ এনে ঘর করে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে হাত বদল করে পজেশন বিক্রি ও ভাড়া দিয়ে কোটিপতি বনে গেছেন। রেলওয়ের জমির টাকায় রেল কর্মকর্তারা ও দখলকারীরা কোটিপতি হলেও রেল হয়েছে গরিব।
রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ জানায়, দখল হওয়া রেলওয়ের ভূমির বর্তমান দাম ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি। লাকসাম-নোয়াখালী রেলওয়ের ভূমিতে গড়ে ওঠা ১০ হাজার ঘর নির্মাণ রয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে দখলকারীর সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার। এসব জমিতে দখলকারীরা লিজ ও লিজবিহীন একের পর এক বিভিন্ন স্থাপনা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মার্কেট নির্মাণ করে, যা ক্রমেইে দখল হয়ে গেছে।
এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের মোট জমির পরিমাণ ৭ হাজার ৭০১ একর। এর মধ্যে কাজে লাগছে না এমন জমির পরিমাণ ৩ হাজার ৩০৫ একর। বিভিন্ন সময় এ জমির ১ হাজার ৭৩৪ একর লিজ দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে লাকসামে রেলওয়ের জমি দখল ও লিজ রয়েছে বেশি।
এদিকে রেলওয়ের জমি দখলে সংশ্লিষ্ট কানুনগোসহ জড়িত কর্মকর্তারা মোটা অংকের টাকার মালিক হলেও রেলওয়ের কতটুকু লাভ হচ্ছে তা দেখার মতো লোক নেই। দায়িত্বরতরা কেউ ভালোভাবে কাজ করছে না।
রেলমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চট্টগ্রাম সিআরবি পরিদর্শনকালে বলেছেন, পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের ৫ হাজার একর জমি বেদখলে রয়েছে। এসব জমি উদ্ধারের প্রক্রিয়া চলছে। তবে মন্ত্রীর নির্দেশ এখনও কার্যকর হয়নি।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমাদের লাকসামকে জানান, সব লিজ বাতিলসহ শিগগিরই সব স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে এবং রেলওয়ের জমি উদ্ধার করা হবে।